জগন্নাথপুর টুয়েন্টিফোর ডেস্ক:: আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার প্রায় ছয় বছরে ৩ দফায় ৪০টি বেসরকারি কলেজ সরকারিকরণ করা হয়েছে। সরকারিকরণকৃত প্রক্রিয়াধীন ২২টি কলেজের মধ্যে সিলেট বিভাগের মাত্র ২টি কলেজের স্থান হয়েছে। সিলেট বিভাগের এই ২টি কলেজের মধ্যে সরকারিকরণ প্রক্রিয়া সুভাগ্যক্রমে এবার তালিকায় স্থান পেয়েছে সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ। জামালগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ ছাড়া সিলেট বিভাগের ভাগ্যবান অন্য কলেজটি হল মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা ডিগ্রি কলেজ।এ ছাড়াসিলেট বিভাগে কোন কলেজ স্থান পায়নি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান মন্ত্রী হলেও তাদের এলাকার কোন কলেজ সরকারিকরণ হয়নি। শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া সিলেটকে আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা মন্ত্রীদের থাকলেও কলেজ সরকারী করণে সঠিক সিদ্ধান্ত না হওয়ায় শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা হতাশ। তাদের মতে সরকারী করণের তালিখায় অগ্রাধিকারভাবে স্থান পাওয়ার কথা সিলেটের প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান মদন মোহন কলেজে। এছাড়াও মফস্বলের কলেজগুলোর মধ্যে জগন্নাথপুর ডিগ্রী কলেজে স্থান পেতে পারত।
জানা গেছে,২০০৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আবার ২০১৪ সনের ৫ জানুয়ারিতে আবার ক্ষমতায় আসে। এই ছয় বছরে সরকার ৩ দফায় প্রথমে ১৩টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫টি ও সম্প্রতি ২২টিসহ মোট ৪০টি কলেজ সরকারিকরণ করেছে। এর মধ্যে ২২টি কলেজ সম্প্রতি সরকারিকরনের লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু এর মধ্যেও সিলেট জেলার কোন কলেজের স্থান হয়নি। সূত্রমতে আরও ৬৪টি কলেজ সরকারিকরণের লক্ষ্যে যাচাই বাছাই চলছে। ওই গুলোর নাম জানা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে মোট ৩০৬টি সরকারি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১৩টি কলেজ গোটা সিলেট বিভাগে। যেখানে রাজশাহীতে বিভাগে ৬৫টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬০টি সরকারি কলেজ রয়েছে।
অপর একটি সূত্র জানায়, সিলেট মহানগরীর সুপ্রতিষ্ঠিত মদনমোহন কলেজ ও জগন্নাথপুর ডিগ্রী কলেজ সরকারিকরণের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছিল। এতে অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশও ছিল। জগন্নাথপুর ডিগ্রী কলেজ সরকারীকরণের বিষয়ে অর্থও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নানের ডিও রয়েছে।
উল্লেখ্য অর্থমন্ত্রী নিজে মদন মোহন কলেজের গভর্নিং বর্ডির সভাপতিও। আর অর্থপরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান জগন্নাথপুর ডিগ্রী কলেজের সভাপতি। কিন্তু নতুন সরকারিকরণের তালিকায় মদনমোহন ও জগন্নাথপুর ডিগ্রী কলেজের নাম না থাকায় তাদের নিবাচনী এলাকার জনগন হতাশ হয়েছেন। দেশের মধ্যে সর্বপ্রাচীন বেসরকারি কলেজ মদনমোহন কলেজ। ১৯৪০ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১০ হাজার ছাত্রছাত্রীর এ কলেজটি সরকারি হওয়ার দাবী সিলেট বাসীর দীর্ঘদিনের। অপরদিকে উপজেলা পযায়ের কলেজগুলোর মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে জগন্নাথপুর ডিগ্রী কলেজ। মদন মোহ কলেজের পর উপজেলা পযায়ে কোন কলেজ সরকারী করণ হলে জগন্নাথপুর ডিগ্রী কলেজ হওয়া দরকার।
জগন্নাথপুর ডিগ্রী কলেজ অধ্যক্ষ আব্দুন নূর জানান,সিলেট বিভাগে যতগুলো কলেজ রয়েছে। তন্মেধ্যে জগন্নাথপুর ডিগ্রী কলেজ সরকারী করণের যাবতীয় কাইটেরিয়া রয়েছে। তাই আমরা আশা করেছিলাম এই কলেজটি সরকারীকরণ হবে। মন্ত্রী এম এ মান্নান মহোদয় কলেজ কমিটির সভাপতি তাই আশাবাদী আগামীতে হয়তো অগ্রাধিকার পাবে। এ ব্যাপারে মদনমোহন কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ বলেছেন, মদনমোহন কলেজের তথ্যগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যথাস্থানে পাঠিয়েছি। দেশের বেসরকারি কলেজগুলোর মধ্যে সর্বপ্রাচীন ও সর্ববৃহৎ এ প্রতিষ্ঠানটি কেন সরকারিকরণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি তা জানা যায়নি। আশাকরি সরকার বিষয়টি ভবিষ্যতে বিবেচনা করবেন। এছাড়াও সিলেটের অন্যান্য বেসরকারি কলেজগুলো সরকারিকরন করা প্রয়োজন বলে তিনি জোর দাবী জানান।
নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম হোসেন আজাদ জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা আমাদের কলেজকে সরকারিকরণের দাবি জানিয়েছি। গত জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড সফরের সময় আমরা এ দাবী জানাই। আমরা আশাবাদী। তবে সিলেটের উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও সরকারিকরণ করা দরকার বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।
এবিষয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদেরকে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন সমস্ত দেশের জন্য কাজ করতে। আমি আঞ্চলিকতায় বিশ্বাসী নই। আমার কাছে সুনামগঞ্জ যা চিলমারিও সমান অগ্রাধিকার। তবে মদন মোহন কলেজ ও জগন্নাথপুর ডিগ্রী কলেজ সরকারীকরণে আমাদের প্রচেষ্ঠা অব্যাহত থাকবে। আশা করি আগামীতে এ দুটি কলেজ স্থান পাবে।