সংরক্ষিত আসনে সিলেটে মনোনয়ন পেয়েছেন রমা চক্রবর্তী
জেনে নিন তাঁর জীবনবৃত্তান্ত
স্টাফ রিপোর্টার-
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে মহিলা সংরক্ষিত আসনে নিজেদের মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। সিলেটে মনোনয়ন পেয়েছেন বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রুমা চক্রবর্তী। বুধবার (ফেব্রুয়ারি ১৪) বিকেলে গণভবনে সংরক্ষিত নারী আসনের আওয়ামী লীগের ৪৮ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
প্রসঙ্গত, এবার সংরক্ষিত নারী আসনে (সুনামগঞ্জ-সিলেট) সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী নয়জন নারীনেত্রী আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডনের সহধর্মিনী মোমতাহিনা হাসনাত ঋতু, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী অ্যাড. শামছুন্নাহার বেগম শাহানা, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুসনা হুদা, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নিগার সুলতানা কেয়া, দিরাই উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. রিপা সিনহা, জেলা পরিষদ সদস্য মোছাম্মৎ নুরুন্নাহার, জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি সানজিদা নাসরিন ডায়না, জেলা পরিষদ সদস্য সেলিনা বেগম ও জামালগঞ্জের বাসিন্দা সিলেট কোর্টের আইনজীবী বনানী দাশ।
এক নজরে রুমা চক্রবর্তী
রুমা রায় চৌধুরীর জন্ম ১৯৫৬ সালের ৫ই মার্চ সিলেটে। তবে বিয়ের পর থেকে তিনি রুমা চক্রবর্তী হিসেবে পরিচিত। বাবা রবীন্দ্র রায় চৌধুরী এবং মা সরজ বালা চৌধুরী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন রুমা রায়৷ তবে তিনি ঢাকায় বড় বোনের বাসায় থেকে পড়াশোনা করার কারণে তৎকালীন আন্দোলন-সংগ্রামের সাথে জড়িয়ে পড়েন৷
তিনি মিরপুর হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন৷ এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি স্বরূপ ঢাকা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়েও নার্সিং প্রশিক্ষণ নিয়ে সহকারী সেবিকা হিসেবে কাজ শুরু করেন৷ পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে এবং বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কাঠের বন্দুক নিয়ে প্রশিক্ষণ নেন কিশোরী রুমা রায়৷ তবে ২৫শে মার্চ রাত্রেই যখন পাক হানাদার বাহিনীর নারকীয় তা-ব শুরু হয় তখনই তিনি বুঝতে পারেন যে, এতোদিন ধরে তাঁর নার্সিং এবং অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ নেওয়া খুব যথার্থ হয়েছে৷
যুদ্ধ শুরুর দিন থেকেই আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবায় রত হলেন দেশপ্রেমী সাহসী নারী রুমা চক্রবর্তী৷ মে মাস পর্যন্ত তিনি ঢাকায় থেকে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন৷ কিন্তু এরপর ভুট্টো প্রচারণা শুরু করে যে, ভারত পূর্ব পাকিস্তানকে আক্রমণ করেছে৷ ফলে গ্রাম্য মানুষের মাঝে ‘হিন্দু মারো’ প্রবণতা শুরু হয়৷ এসময় রুমা চক্রবর্তী এবং তাঁর বড় বোন অন্যদের সাথে ভারত পাড়ি দেন৷
এমনই ঝুঁকির মধ্য দিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে কলকাতায় পৌঁছেন রুমা চক্রবর্তী এবং তাঁর বোন৷ সেখানে বাংলাদেশ দপ্তরে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে নিজেদের আগ্রহের কথা জানান তাঁরা৷ এসময় চব্বিশ পরগণার বনগাঁয় রেডক্রসের সহায়তায় অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ সেখানে চল্লিশটি আসন ছিল৷ সেই হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে অন্যদের সাথে যোগ দেন রুমা চক্রবর্তী এবং তাঁর বড় বোন৷ দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত সেই হাসপাতালে এবং মাঝে মাঝে যুদ্ধের এলাকায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন তাঁরা৷
এদিকে বুধবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন ১ হাজার ৫৪৯ জন। এতে দলটির আয় হয়েছে ৭ কোটি ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।