বিশেষ প্রতিনিধি::
জগন্নাথপুরে বছরজুড়ে হত্যা, আত্মহত্যা ও রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ছিল আলোচিত। বছরের শুরুতে এক নারীকে নৃংশসভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা, শেষ দিকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালককে গলা কেটে খুন ও আগস্টে যুবকের পায়ের রগ কেটে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আলোচনায় ছিল দুইটি রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনাও। এছাড়াও শিশুসহ ৭টি হত্যাকাণ্ড ও ৭টি আত্মহত্যার ঘটনায় স্থানীযদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠার জন্ম নেয়।
খোঁজ নিয়ে যায়, চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি সকালে পৌরশহরের ইকড়ছই আলিয়া মাদরাসার পিছনে চারা ক্ষেত থেকে আগুনে পোড়া অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি কেরোসিনের বোতল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনা এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ তদন্তে ওই নারীর পরিচয় পাওয়া যায়। তার নাম পিয়ারা বেগম (৫২)। তিনি দিরাই উপজেলার মাতারগাও গ্রামের চন্দন মিয়ার স্ত্রী। এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি হত্যা মামলা হয়েছে।
২৬ জানুয়ারি রানীগঞ্জ ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের ওয়াজ মাহফিলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত ছমির আলী (৬০) ২৮ জানুয়ারি সিলেট ওসমানিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। ১১ অক্টোবর ইনাতগঞ্জ আশ্রায়ন প্রকল্পের বাসিন্দা আল আমিনের শিশুপুত্র সানজিদ আলমের (৯) এর মরদেহ এক মাছের ফিসারি থেকে উদ্ধার করা হয়। ৭ অক্টোবর ওই শিশুকে অপহরণের পর খুন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ হত্যায় জড়িত তিন অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে।
৫ আগস্ট পৌরসভার ইনাতনগরের মল্লিক আকমল হোসেনের ছেলে মল্লিক আফজল হোসেন কে (২৯) পূর্ব বিরোধের জেরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পায়ের রগ কেটে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। এঘটনায় তার মা বাদি হয়ে ১৮ জনের নামে মামলা করেন।
৭ নভেম্বর উপজেলা চিলাউড়া হলদিপুর ইউনিয়নের বাউধরন গ্রামের মৃত শাফিকুর রহমানের ছেলে কিশোর রায়হান মিয়া (১৬) হামলার ঘটনায় আহতাবস্থায় মারা যায়। এ ঘটনায় নিহতের মা রুবি বেগম ৬ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার মূলহোতাসহ দুইজন গ্রেপ্তার করে।
১২ নভেম্বর পাইলগাঁও ইউনিয়নের বাগময়না গ্রামে মসজিদের ভবন নির্মাণে নিয়ে সুজাত মিয়া ও আবুল কাছের পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সুজাত মিয়া (৭০) নিহত হন। আহত হন আরো ৪০ জন। এ ঘটনায় ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে।
১৭ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে সুজিত দাস (৩০) নামের এক সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালককে ধারালো ছুরি দিয়ে গলাকেটে লাশ রানীগঞ্জ সেতুর ওপর রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে দিয়ে সিএনজি নিয়ে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা। এখবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে মুর্হূতেই শত শত মানুষ ঘটনাস্থালে এসে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানান। নিহত ওই চালক উপজেলার চিলাউড়া—হলদিপুর ইউনিয়নের গোপরাপুর গ্রামের সোহাগ দাসের ছেলে। আলোচিত এ খুনের ঘটনায় পুলিশ র্যাবের সহযোগিতায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূলহোতা জগন্নাথপুরের সালদিকা গ্রামের আলী হায়দার (৩৫) সহ তিনকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় অটোরিকশা ও হত্যায় ব্যবহৃত একটি ছুরি।
১৯ ডিসেম্বর উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে অনলাইনে জুয়া খেলায় বারণ করায় স্বামীর চেয়ারের আঘাতে স্ত্রী নাজিয়া বেগম (২৫) নিহত হন। ঘটনার পর স্বামী আমজাদ হোসেন পালিয়ে গেলেও পরে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। এদিকে ১১ আগস্ট জগন্নাথপুরের পাইলগাঁও ইউনিয়নের হাড়গ্রামে ঘরের তীরের সঙ্গে দলীয় ওড়না পেঁচানো ঝুলন্ত অবস্থায় রাজমিস্ত্রি আলামিন মিয়া (২২) মরদেহ দেখতে পান স্বজনরা। এসময় তার তাহের কব্জিতে কাটা দাগ ও ঘরের বিভিন্নস্থানে রক্তের দামের চিহৃ পাওয়া গেছে। এ মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য সৃষ্টি হয়। অপরদিকে ২২ জুন উপজেলার সমধল গ্রামে রিংকর বিশ্বাস (১৬) নামের এক কিশোর গাছ থেকে পড়ে মারা যায় বলে শুনা গেলেও এ মৃত্যু ঘিরে রহস্য দেখা দেয়। মৃত্যুর ৬ দিন পর আদালতের নির্দেশে মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। এছাড়াও চলতি বছরে ৭টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে।
জগন্নাথপুর থানার ওসি রুহুল আমীন জানান, আমি এ থানায় নতুন এসেছি। জগন্নাথপুরের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে আমরা কাজ করছি।