শরিয়তে পশু পালন একটি বৈধ পেশা। নবী-রাসুলগণও পশুপালন করেছেন। তাই যেকোনো মুসলিম জীবিকার তাগিদে পশুপালন করতে পারেন। প্রাচীন যুগে মানুষ পশু পালন করত উন্মুক্ত মাঠে, পাহাড়ি ভূমিতে, লোকালয়ের বাইরে জনশূন্য ভূমিতে।
বর্তমান যুগে পশু পালন করা হয় বাড়িতেই, বিশেষ করে বাণিজ্যভিত্তিক পশু পালনের বড় অংশই বাড়িতে বা বাড়িসংলগ্ন খামারে হয়ে থাকে। অনেকেই বাড়িতে হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল ইত্যাদি পালন করে থাকেন।
যাঁরা বাড়িতে বা লোকালয়ের ভেতরে পশু-পাখি পালন করেন, তাঁদের জন্য ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা হলো— তাঁরা যেন প্রতিবেশীর কষ্টের কারণ না হন। অনেককেই দেখা যায়, পশু-পাখির মলমূত্র ঠিকভাবে পরিষ্কার করেন না।
করলেও তা উন্মুক্ত স্থানে এমনভাবে রেখে দেন, যা প্রতিবেশীর কষ্টের কারণ হয়। কখনো দেখা যায়, পশু-পাখির মলমূত্র ধোয়া পানি মানুষ চলাচলের রাস্তায় ফেলা হয়। এতে দুর্গন্ধে প্রতিবেশী ও পথচারী মানুষের কষ্ট হয়। চলাচলের সময় মানুষের কাপড় নষ্ট হয়।
প্রতিবেশী ও পথচারীকে এভাবে কষ্ট দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ।
কোরআনে মহান আল্লাহ প্রতিবেশী ও পথচারীর অধিকার সম্পর্কে বলেছেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং কোনো কিছুকে তাঁর শরিক কোরো না; মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূরপ্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথি, মুসাফির ও তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার কোরো, নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক ও অহংকারীকে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩৬)
হাদিসে প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া ঈমানের পরিপন্থী বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে লোক আল্লাহতে ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর যে লোক আল্লাহ ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন মেহমানকে সম্মান করে।
আর যে ব্যক্তি আল্লাহতে ও শেষ দিনে ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১৩৬)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়াকে জান্নাতে যাওয়ার প্রতিবন্ধক হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ না থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৬)
মহানবী (সা.) আরো বলেন, ‘আমার উম্মতের ভালো-মন্দ সব আমল আমার কাছে উপস্থিত করা হয়েছে। তখন আমি তাদের ভালো কাজগুলোর মধ্যে দেখতে পেলাম রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরানো। আর মন্দ কাজগুলোর মধ্যে দেখতে পেলাম কফ পুঁতে না ফেলে মসজিদে ফেলে রাখা।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১২০)
পশু-পাখি পালনের কারণে যদি প্রতিবেশী ও পথচারীদের কষ্ট হয় এবং তা পরিবেশে রোগজীবাণু বিস্তারের কারণ হয়, তবে ব্যক্তির উচিত হলো সম্ভব হলে তা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া, যেন অন্যদের কষ্ট না হয়। আর যদি বিকল্প জায়গা না থাকে অথবা অন্য কোনো কারণে সুযোগ না থাকে, তবে পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে এমনভাবে বর্জ্য অপসারণ করবে, যেন অন্যদের কষ্টের কারণ না হয়। যেমন পশু-পাখির মলমূত্র উন্মুক্ত স্থানে না ফেলা, তা লোকালয়ের
বাইরে নির্ধারিত স্থানে ফেলে আসা ইত্যাদি।
যদি কোনো ব্যক্তির পশু-পাখির খামার অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে অথবা বারবার বলার পরও সে উন্মুক্ত স্থানে পশু-পাখির মলমূত্র ফেলে পরিবেশ নষ্ট করে, তবে এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। ভুক্তভোগীরা রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানাবে এবং তারা অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কেননা এই ব্যক্তি জনস্বার্থবিরোধী কাজে লিপ্ত আছে। খাজা আলী হায়দার আমিন আফেন্দি (রহ.) বলেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের মালিকানাধীন বিষয়ে যেভাবে ইচ্ছা হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে। অর্থাৎ সে তার ইচ্ছানুসারে যেকোনো কাজ করতে পারবে। তার কাজে বাধা দেওয়া কারো জন্য বৈধ নয়, যতক্ষণ না তা অন্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ না হয়।’ (দুরারুল হুককাম : ৩/২০১)
আল্লাহ সবাইকে দ্বিনের সঠিক বুঝ দান করুন। আমিন।
সৌজন্যে কালের কণ্ঠ