Site icon জগন্নাথপুর টুয়েন্টিফোর

নতুন ধরনের সাইবার অপরাধ বেড়েছে ২৮১ শতাংশ

জগন্নাথপুর২৪ ডেস্ক::

দেশে নানা অভিনব কৌশলে সংঘটিত হচ্ছে সাইবার অপরাধ। গবেষণায় নিত্যনতুন অপরাধের মাত্রা ব্যাপক হারে বাড়ার চিত্র উঠে এসেছে, যা প্রচলিত অপরাধের বিভিন্ন ধরন থেকে ব্যতিক্রম। এগুলোকে ‘অন্যান্য’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিক্যাফ) গবেষণা প্রতিবেদনে। সাইবার স্পেসে ভুক্তভোগীদের দেওয়া মতামতের ভিত্তিতে শনিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটি মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ সাইবার অপরাধপ্রবণতা-২০২৩’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সিক্যাফ।
২০২২ সালের প্রতিবেদনে যেখানে ‘অন্যান্য’ ক্যাটাগরিতে অপরাধ ছিল ১ দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০২৩ সালে প্রতিবেদনে এটি ২৮১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে ৬ দশমিক ৯১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে নানা মাত্রিক প্রতারণা। যেমন: চাকরি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস এবং অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে কথিত ঋণ কার্যক্রম ইত্যাদি।
সংগঠনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এ প্রতিবেদন পেশ করেন গবেষণা পর্ষদের সদস্য স্বর্ণা সাহা। সিক্যাফের কার্যনির্বাহী সদস্য খালেদা আক্তার লাবনীর সঞ্চালনায় প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা করেন- ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন-আইএসপিএবি সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া, বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস মহাপরিচালক ব্রিগে.জে. মো. নাসিম পারভেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাশেদা রওনক খান, সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা বিষয়ক জাতীয় কমিটি, বাংলাদেশের সদস্য প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) গবেষণা কর্মকর্তা নাহিয়ান রেজা সাবরিয়েত। আর ভিডিও বার্তায় দিয়ে আলোচনায় অংশ নেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বিজিডি ই গভ সার্ট প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলম খান।
ধারাবাহিকভাবে পঞ্চমবারোর মতো প্রকাশিত এই প্রতিবেদন বলছে, দেশে সাম্প্রতিক সময়ে নতুন ধরনের অপরাধের মাত্রা বেড়েছে। প্রতিবেদনে ২০১৫-২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে বেশ কয়েকটি গ্র্যাফে। সেখানে ১১টি ট্যাবে করা তথ্য বিশ্লেষণে ‘অন্যান্য’ অপরাধের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে বলে দৃষ্টিগোচর হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ২০২২ সালের প্রতিবেদনে যেখানে অন্যান্য অপরাধ ছিল ১ দশমিক ৮১ শতাংশ। ২০২৩ সালে প্রতিবেদনে এটি ২৮১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে ৬ দশমিক ৯১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এসব অপরাধের মধ্যে রয়েছে নানা মাত্রিক প্রতারণা। এই প্রতারণাগুলো হচ্ছে চাকরি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস এবং অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে।
তবে বরাবরের মতো অন্তর্জালের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অপরাধের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হলেও বিগত পাঁচ বছরে তুলনামূলকভাবে কমছে সাইবার বুলিং সংশ্লিষ্ট অপরাধের ঘটনা (অনলাইন ও ফোনে বার্তা পাঠানো, পর্নোগ্রাফি, সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার ও ছবি বিকৃতি)। এ ধরনের অপরাধ ২০২২ সালে ৫২ দশমিক ২১ শতাংশ রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০১৭ সালে ছিল ৫৯ দশমিক ৯০ শতাংশ।
সামাজিক মাধ্যমসহ অন্যান্য আইডি হ্যাকিংয়ের ঘটনাগুলোও ধারাবাহিকভাবে কমলেও আর্থিক সংশ্লিষ্ট প্রতারণা থেমে নেই। ২০২২ সালে ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৬৪ শতাংশই অনলাইনে পণ্য কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অপরদিকে ভুক্তভোগীদের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমের আইডি হ্যাকিংয়ের শিকার সর্বোচ্চ ২৫ দশমিক ১৮ শতাংশই নারী। তারপরও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীতে অভিযোগের হার দিন দিন কমছে। ২০১৮ থেকে পাঁচটি জরিপে সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের মাঝে কতজন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেছেন, তার ফলাফল উদ্বেগজনক। জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ভুক্তভোগীদের মধ্যে অভিযোগকারীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। ২০১৮ সালের জরিপে যেখানে অভিযোগকারীর শতকরা হার ছিল ৬১ শতাংশ, ২০২৩ এ গিয়ে তা কমে ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশে নেমেছে।
এছাড়াও ২০২৩ সালের জরিপে ভুক্তভোগীদের ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের নিচে, যা ২০১৮ সালের জরিপের তুলনায় ১৪০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি (২ শতাংশের বেশি) অপপ্রচারের শিকার হয় শিশুরা। বয়সভিত্তিক অপরাধের ধরনে ভুক্তভোগীদের মধ্যে তরুণরা (১৮-৩০ বছর) সর্বোচ্চ (১২ শতাংশের বেশি) একই ধরনের অপরাধের শিকার।
সিক্যাফ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বশেষ জরিপে ভুক্তভোগীদের ৭৫ শতাংশের বয়সই ছিলো ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ২০১৮ সালের জরিপ থেকে এ পর্যন্ত একাধারে এই বয়সী ভুক্তভোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ এবং তাদের মধ্যে অধিকাংশই সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্টে অপপ্রচার ও আইডি হ্যাকিংয়ের শিকার।

Exit mobile version