জগন্নাথপুর২৪ ডেস্ক::
দোয়ারাবাজারে নির্বাচনী সহিংসতায় মহিলাসহ কমপক্ষে দেড়শ জন আহত হয়েছে। এরমধ্যে ৫৫ জন গুলিবিদ্ধ রয়েছে। এদের বেশিরভাগই পুলিশের রাবার বুলেটে আহত হয়েছে। দুপুর ১২ টায় উপজেলা সদরের পাশের গ্রাম পূর্ব মাছিমপুর ও নৈনগাঁও গ্রামবাসীর মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ সংঘর্ষ ঠেকাতে ১০০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়েছে। ফের সংঘর্ষের আশংকায় ওই দুই গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষস্থল থেকে পুলিশ নয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গেল সাত জানুয়ারি’র নির্বাচনে সুনামগঞ্জ—৫ আসনের দোয়ারাবাজার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মহিবুর রহমান মানিক ও স্বতন্ত্র ঈগল প্রতীকের প্রার্থী শামীম আহমদ চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। কেন্দ্রের পাশের গ্রাম পূর্ব মাছিমপুর ও পশ্চিম মাছিমপুরবাসীর মধ্যে এই সংঘর্ষের জেরে উত্তেজনা বিরাজ করছিল আশপাশের গ্রামের নৌকা ও ঈগল সমর্থকদের মধ্যেও।
মঙ্গলবার রাতে পূর্ব মাছিমপুরের আমরু মিয়ার ছেলে ঈগল মার্কার সমর্থক শামীম আহমদের সঙ্গে পাশের নৈনগাঁও গ্রামের নৌকার সমর্থক আবুল হোসেনের কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে আবুল হোসেনের সমর্থকরা শামীম আহমদের পূর্ব মাছিমপুরের বাড়িতে ইট—পাটকেল ছুড়ে। পুলিশ রাতে পরিস্থিতি শান্ত করে দুই পক্ষকে সরিয়ে দেয়। সকালে শামীম আহমদ ও তার ভাই ইমরুল আহমদের নেতৃত্বে তাদের সমর্থকরা আবুল হোসেনের দোয়ারা বাজারের বাসভবনে এসে হামলা করে। এই ঘটনার খবর নৈনগাঁও গ্রামে পেঁৗছালে আবুল হোসেনের পক্ষের নৈনগাঁও গ্রামবাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে উপজেলা সদরে এসে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষ এক পর্যায়ে নৈনগাঁও ও পূর্ব মাছিমপুর গ্রামবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের একশ’র বেশি লোকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
আবুল হোসেনের বাবা জেলা পরিষদ সদস্য খালেক মিয়া বললেন, নির্বাচনের দিন পূর্ব ও পশ্চিম মাছিমপুরের নৌকা ও ঈগল মার্কার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। আমি বা আমার ছেলে যেহেতু নৌকা মার্কার সমর্থক আমরা পশ্চিম মাছিমপুরের লোকজনকে বুঝিয়ে কেন্দ্র থেকে নিয়ে আসি। মঙ্গলবার আবার পূর্ব মাছিমপুরের শামীম, ইমরুল, হুমায়ুন ও ফয়েজসহ বেশ কিছু ছেলে আমার ছেলের দোয়ারাবাজারের বাসভবনে এসে ডাকাডাকি শুরু করে। খবর পেয়ে আমাদের গ্রামের মানুষ উত্তেজিত হয়ে পূর্ব মাছিমপুরের দিকে যেতে চেয়েছিল, পুলিশ এসে তাদের ফিরয়ে আনে। বুধবার সকালে আমার ছেলে আবুল হোসেনকে বাসার সামনে এসে তারা হামলা করে। এসময় আমার ছেলে আবুল হোসেন, ভাই সাংবাদিক আশিক মিয়া ও জাবেদ আহত হয়। খবর পেয়ে গ্রামের লোকজন ওখানে গেলে দুইপক্ষে সংঘর্ষ বাধে। এসময় পুলিশের রাবার বুলেটে গ্রামের বহুলোক আহত হয়। রাবার বুলেটে আহত ৪৫ জনকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পূর্ব মাছিমপুরের ইমরান আহমদ বললেন, ভোটের সময় আমরা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ায় ভোটের পরের দিন থেকে নৌকার সমর্থক আবুল হোসেন হুমকি—ধমকি দিতে থাকে। মঙ্গলবার তারা গ্রামে এসে ইট পাটকেল ছুড়ে ঘরবাড়ি ভাংচুর করেছে। বুধবার সকালে এসে আবার হামলা করেছে। এসময় আমাদের ৫০ জনের মত আহত হয়েছে। এরমধ্যে ১৫ জনের শরীরে পুলিশের রাবার বুলেট লেগেছে। তাদেরকে চিকিৎসা নিতে সিলেটে পাঠানো হয়েছে।
ঈগল প্রতীকের প্রার্থী সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরী বললেন, এমপি মানিকের সমর্থক খালেক মিয়া ও তার ছেলে আবুল হোসেন দোয়ারাবাজারের গ্রামে গ্রামে আমার কর্মী সমর্থকদের মারপিট করছে। নির্বাচনের দিন আবুল হোসেন কেন্দ্র তালাবদ্ধ করে ভোট দিতে চেয়েছিল। আমার কর্মীরা বাধা দেয়। এ নিয়ে সংঘর্ষ হয়। আবুল হোসেনের নেতৃত্বে পূর্ব মাছিমপুরের বাড়ি—ঘরে মঙ্গলবার রাতে একবার এবং আজ সকালে আরেকবার হামলা হয়েছে।
সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বললেন, যারা বিশৃঙ্খলা করছে তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়ায় তারা আবুল হোসেনকে বাসভবনে এসে হামলা করেছে। এই নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ বুধবার বিকাল ৩টায় জানালেন, নির্বাচনী সহিংসতার জেরে কাল একপক্ষ আরেক পক্ষকে আক্রমণ করেছে। আজকে আবার অন্যপক্ষ হামলা করে। এই নিয়ে দুই গ্রামবাসী সংঘর্ষে জড়ান। পুলিশ সংঘর্ষ থামাতে ১০০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়েছে। নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। পুলিশ দুই গ্রামেই মোতায়েন আছে। দুইপক্ষকেই এজাহার দিতে বলা হয়েছে। এখনো (বিকাল সোয়া ছয়টা) কেউ মামলা নিয়ে আসে নি।